'রাষ্ট্র' সম্পর্কে আলোচনা_অচিন ভানাইক এবং কুণাল চট্টোপাধ্যায়

[গত ২১শে অগাস্ট, ২০২১, ভূপেশ ভবন অডিটোরিয়ামে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে 'দা ডিলিজেন্ট'।

বিষয়ঃ 'রাষ্ট্র'-এর ধারণা সম্পর্কে আলোচনা

বক্তাঃ 'র‍্যাডিক্যাল সোশ্যালিস্ট'-এর পক্ষে কমঃ অচিন ভানাইক এবং কমঃ কুণাল চট্টোপাধ্যায়  

অংশগ্রহণেঃ পিডিএসএফ, অসাম্প্রদায়িক, 'কাউন্টার এরা' পত্রিকা, ডিলিজেন্ট পত্রিকা, র‍্যাডিক্যাল সোশ্যালিস্ট-এর প্রতিনিধিরা এবং কিছু ব্যাক্তি অ্যাক্টিভিস্টরা 

নীচে রইল কমঃ অচিন ভানাইকের বক্তব্যের সারমর্ম।

'দা ডিলিজেন্ট' সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিসরের আজকের দিনের আন্দোলনের কর্মীদের প্রশ্নগুলিকে কেন্দ্র করে বেশকিছু আলোচনা সভার আয়োজন করছে, বিভিন্ন ধারার প্রগতিশীল এবং শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে থাকা সংগঠনের সদস্যের বক্তা করে নিয়ে এসে, অদূর ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আন্দোলনের পাথেয় তাত্ত্বিক তথ্যসমূহের সংরক্ষণের জন্য।

বক্তাদের মত তাঁদের একান্ত নিজস্ব। 'দা ডিলিজেন্ট' উত্থাপিত মত, সমর্থন বা বিরোধ, কোনটাই না করে অদূর ভবিষ্যতে ময়দানে রাজনীতির সহায়ক রসদবহুল বিতর্কগুলিকে ত্বরান্বিত করতে সচেষ্ট।]  

কুণাল চট্টোপাধ্যায়ের ভাষান্তরের লিঙ্কঃ https://www.youtube.com/watch?v=BsS6B4fFUNQ&t=2784s

পুঁজিবাদ: অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক-এর মধ্যে বিচ্ছেদ

‘ফ্রি লেবার’-এর উপর ভিত্তি করে একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া, যার অর্থনীতি বহির্ভূত জবরদস্তির প্রয়োজন নেই।

শ্রেণী শক্তি এবং রাষ্ট্র শক্তির মৌলিক বিচ্ছেদ। দুটি ভিন্ন ধরণের রাজনীতি (কর্মক্ষেত্র এবং সমাজ) স্বাভাবিকভাবে সংযুক্ত নয় এমন দুটি ভিন্ন ধরণের প্রতিরোধের সাথে যুক্ত, তাই বিপ্লবী সাংগঠনিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন।

পুঁজিবাদী সমাজে রাষ্ট্র হল একটি শ্রেণী রাষ্ট্র যা পুঁজিবাদী শাসক শ্রেণীর উপর নির্ভরশীল কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত। এই স্বায়ত্তশাসন শাসক শ্রেণীগুলির পক্ষে আরও কার্যকারীভাবে প্রচার ও সুরক্ষা প্রদান করতে সাহায্য করে --- রাষ্ট্র হল শাসক শ্রেণীর, এবং তাদেরই জন্য, অগ্রণী সংগঠন।

কেন নির্ভরশীল --- এর নিজস্ব ব্যবহারিক-আর্থিক প্রজনন একটি 'সুস্থ' পুঁজিবাদী সঞ্চয় প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে যা প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়িক আস্থার দ্বারা পরিচালিত হয়।

এটি অর্থনৈতিক এবং সামাজিক-রাজনৈতিক ফ্রন্টে কার্যকর।

অর্থনৈতিক

(১) রাষ্ট্র হল শাসক শ্রেণীর মধ্যেকার এবং পুঁজিবাদের মধ্যেকার উত্তেজনা ও দ্বন্দ্বের প্রধান সালিসকারী।

(২) ম্যাক্রো-অর্থনৈতিক এবং সংকট পরিচালক।

(৩) বিশ্বব্যাপী ভারতীয় TNC-র প্রবর্তক এবং রক্ষক।

সামাজিক-রাজনৈতিক

(১) 'ক্ষতিগ্রস্তদের' নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী

(২) শক্তিশালী সংগ্রাম এবং অন্যান্য নিপীড়িত সামাজিক গোষ্ঠীগুলি রাষ্ট্রকে শাসক শ্রেণির 'সাধারণ স্বার্থে'-এর দিকে ঠেলা দিতে পারে (যেমন, জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া) যা বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এবং বৃহত্তর জনমানসের সহযোগিতা করতে সহায়তা করে, অন্তত পক্ষে কিছু সময়ের জন্য। এই লাভগুলি কখনও স্থায়ী হয় না কারণ এগুলি পুঁজিবাদী সঞ্চয়ের ছন্দ এবং উচ্চ ও নিম্ন শ্রেণীর মধ্যেকার শক্তির পরিবর্তনশীল সম্পর্কের উপর নির্ভর করে।

(৩) সম্মতি সংগঠিত করে (৩টি আকারে)। উদার গণতন্ত্রে, সুশীল সমাজের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও করে।

পুঁজিবাদী উদার গণতন্ত্র

এই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিচ্ছেদ একটি উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতির উত্থানকে সহন করলেও তা পুঁজিবাদী শাসনের জন্য ‘সেরা রাজনৈতিক খোলস’ হিসেবে সক্ষম করে না। ঐতিহাসিকভাবে সর্বত্র উদার গণতন্ত্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলির প্রতিষ্ঠা নীচু তলা থেকে জনপ্রিয় সংগ্রামের মাধ্যমে এসেছে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলি হলঃ ক) সার্বজনীন ভোটাধিকার এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন; খ) নির্বিচারে গ্রেপ্তার থেকে মুক্তি, একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং আইনের শাসন; গ) নাগরিক স্বাধীনতা; ঘ) রাষ্ট্রের উপর ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণের অনুপস্থিতি এবং ধর্ম নির্বিশেষে নাগরিকত্বের অধিকারে সমতা।

কিছু সময় এবং স্থান বিশেষে জনপ্রিয় সংগ্রাম এবং নীচ থেকে চাপ গণতন্ত্রের একটি গভীর ধারণা এবং অনুশীলনের দিকে ঠেলে দিয়েছে; যেমন শিল্প এবং সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে (বিভিন্ন সংস্থা এবং অন্যান্য কর্মক্ষেত্র, কিংবা পাশাপাশি হাসপাতাল এবং কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে) ক্ষমতার সম্পর্কের গণতন্ত্রীকরণ।

হ্যাঁ, এমনকি সর্বোত্তম পর্যায়ও এটি বুর্জোয়া গণতন্ত্রী রয়ে যায় কারণঃ ক) কিছু অধিকার/আইন/নিয়ম বুর্জোয়াই; খ) যেসব প্রতিষ্ঠানের উপর গণতান্ত্রিক অধিকার এবং আইন ও তার প্রয়োগ টিকে আছে, সেগুলো সবই কাঠামোগতভাবে শ্রেণী-পক্ষপাতপূর্ণ। তা সত্ত্বেও, উদার গণতন্ত্রের একটি ন্যূনতম ফর্মও 'সেরা রাজনৈতিক খোলস' হিসেবে রয়ে গেছে কারণঃ (১) এটি প্রকৃত এবং সার্থকভাবে, যদি যোগ্য হয়, নির্দিষ্ট শ্রেণী-অতিক্রমকারী সার্বজনীন অধিকারের অনুশীলনের অনুমতি দেয়। (২) এটি বিভিন্ন শক্তির বিভিন্ন পর্যায়গুলির একটি বৃহত্তর এবং ব্যাপ্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করে, অর্থাৎ এর মাধ্যমে প্রতিরোধকে বিকেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে।

নয়াউদারবাদী বিশ্বায়ন হল পুঁজিবাদী সঞ্চয়ের একটি নতুন ব্যবস্থা, যা কেন্সীয় মতবাদ এবং উন্নয়নমুখোরতার থেকে আলাদা, এবং মূল পুঁজিবাদী দেশগুলির শ্রমিক শ্রেণীর শক্তির ব্যাপক হ্রাসের কারণে সম্ভব হয়েছে। আয় ও সম্পদ এবং সেইজন্য ক্ষমতার অসমতার ব্যাপক বৃদ্ধির ফলে সর্বত্র উদার গণতন্ত্রের মূল বিষয়বস্তু ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে।

উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে ক্রমশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক করা এক জিনিস, কিন্তু এটিকে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা অনেক বেশি কঠিন কারণ আজ 'গণতন্ত্র' (সমাজতন্ত্র বা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় মুক্তি আন্দোলন নয়) একটি মুক্তমনা জনসাধারণের আদর্শ হিসেবে প্রকাশ পাচ্ছে। ধ্রুপদী মার্কসবাদী বিপ্লবীরা ঐতিহাসিকভাবে তিনটি জিনিসের উপর কম গুরুত্ব দিয়েছেন --- পুঁজিবাদের উত্পাদনশীলতা, জাতীয়তাবাদের ক্ষমতার অলিন্দে স্থিতিশীলতা ও তার জনপ্রিয় আবেদন, ক্ষয়প্রাপ্ত হলেও গণতান্ত্রিক রাজনীতির অস্তিত্ব।

সংসদীয়/রাষ্ট্রপতি নির্ভর গণতন্ত্রে বুর্জোয়া পুঁজিবাদী শাসনের সাথে শ্রমিক, পুঁজিপতি এবং সাধারণ জনগণকে বাঁধার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী আঠা কিছু আদর্শ বিষয়ক আলোচনার পটানোর শক্তি নয় বরং সংসদ/নির্বাচনের অস্তিত্ব। এটাই মূল মতাদর্শগত ফ্যাক্টর যা সংখ্যালঘু পুঁজিবাদী শাসনের গভীর বাস্তবতাকে ঢেকে দেয়।

মনে রাখা দরকার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, কিছু সামরিক শাসন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করেছে এবং বেসামরিক শাসনের দিকে চলে আসতে রাজি হয়েছে; এই শাসন নিছক পুতুল নয়। গণতন্ত্রের ধারাবাহিক ৩০ বছরের ম্যাক্রো-স্তরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো দেশ এখনও সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠার দিকে প্রথমবার কিংবা পুনরায় যাওয়ার শিকার হয়নি। চিলি ব্যতিক্রম এই প্রবণতার।

কি শিখলাম --- আমাদের ভাবতে হবে কিভাবে উদার গণতন্ত্রের মধ্যে কাজ করা যায় যতই শক্তিশালী বা দুর্বল তা হোক না কেন।

নির্বাচন এবং বামেরা

লেনিনবাদী বিপ্লবী সংগঠনগুলোর নির্বাচন এবং পার্লামেন্টে কোনো না কোনোভাবে অংশগ্রহণের দৃষ্টিভঙ্গি আজ একান্ত প্রয়োজন, বিশেষ করে যখন অনেক দেশেই এই ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ঐতিহাসিকভাবে অপ্রত্যাশিত স্থায়িত্ব (সময়ের ভিত্তিতে) পেয়েছে। বুর্জোয়া উদার গণতন্ত্রে অংশগ্রহণকারী শাসকগোষ্ঠীর কাছে এই শাসন কাঠামোর মাতৃগর্ভসুলভ যোগসূত্র উন্মোচন এবং স্বাধীনতা ও জনপ্রিয় ক্ষমতার প্রকৃত সীমা প্রকাশ করার জন্য এই অংশগ্রহণ সব থেকে বেশি প্রয়োজনীয়। তাছাড়া, কমিউনিস্ট পার্টি এবং শ্রমিক সংগঠনগুলি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে পারে, যদিও সেগুলি হ্রাস বা প্রত্যাহারের চাপ সবসময়ই থাকে।

এই বুর্জোয়া কাঠামোগুলোতে অংশগ্রহণ আঞ্চলিক থেকে প্রাদেশিক থেকে জাতীয় স্তর পর্যন্ত হওয়া উচিত। এই ধরনের অংশগ্রহণের ফর্মগুলি প্রেক্ষাপট এবং বিপ্লবী গোষ্ঠীর আপেক্ষিক শক্তি, আকার ও সামাজিক ভিত্তি বিশেষে পরিবর্তিত হবে। এর অর্থ হতে পারে, নির্বাচন বয়কট বা NOTA বা নির্দিষ্ট স্বাধীন প্রগতিশীল প্রার্থীদের কিংবা কমিউনিস্ট/শ্রমিক দলকে, সামাজিক গণতান্ত্রিক অন্যান্য বামকে, অথবা এমনকি নিজেদের প্রার্থীদের (নির্বাচিত হওয়ার প্রকৃত সম্ভাবনা থাকা) ভোট দিতে প্রচার করা যা সহজভাবে নিজস্ব রাজনীতির ব্যাপক স্বীকৃতি নিশ্চিত করবে এবং নিজেদের সদস্যদের, সহানুভূতিশীলদের বা, যারা ইতিমধ্যেই মৌলিক বিপ্লবী ধারণা ও বিশ্বাসের সাথে পরিচিত, তাদের মৌলিক বার্তার মাধ্যমে আকৃষ্ট করবে।

বিপ্লবী গোষ্ঠীকে নির্বাচনের সাথে নির্বাচন বহির্ভূত কার্যকলাপ, বৈধ কার্যকলাপের (যা অত বেশি আন্ডারগ্রাউন্ড বা সশস্ত্র কর্মকাণ্ড নয়) সাথে অবৈধ কার্যকলাপ, যেমন ওয়াইল্ডক্যাট স্ট্রাইক, পাবলিক স্পেস দখল, অবরোধ এবং অন্যান্য আইন অমান্যের মত পদ্ধতির মেলবন্ধন ঘটাতে হবে।

অধিকতর স্থানীয় প্রশাসনে কর্তৃত্ব ও প্রভাবের জন্য নির্বাচিত পদ অর্জন উচ্চতর উপ-আঞ্চলিক, প্রাদেশিক বা জাতীয় স্তরের চেয়ে দরকারী এবং সহজ। এর যে কোনো ক্ষেত্রে, বিপ্লবীদের জন্য উচ্চতর স্তরে নির্বাচনী সাফল্য অর্জনের জন্য ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ (FTPT) নির্বাচনী ব্যবস্থার তুলনায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা সবসময় অনেক বেশি ফলদায়ক। প্রকৃতপক্ষে, FTPT-র ‘জো জিতা ওয়াহি সিকন্দর’ ব্যবস্থা জনসাধারণের রাজনৈতিক আলোচনার পরিসর এবং উপলভ্য বিকল্প নীতি, উভয়কেই সংকুচিত করে বিরাজনীতিকরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এটাই নির্বাচনের সাথে নির্বাচন বহির্ভূত কার্যকলাপের কেন্দ্রিকতার গুরুত্ব অর্পণ করে। এটাই হল বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের প্রধান ক্ষেত্র এবং এখানে সাফল্যই সবচেয়ে কার্যকরীভাবে নির্বাচনী-সংসদীয় পর্যায়ে সম্ভাব্য সাফল্য অর্জন এনে দিতে পারে।

যে কোনো স্তরে বুর্জোয়া শাসন ব্যবস্থার মধ্যে ক্ষমতা অর্জনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য শুধু প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য চাপ দেওয়া নয়। হ্যাঁ, এটা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল এই ব্যবস্থার ক্ষমতাগুলি ব্যবহার করার চেষ্টা করা এবং শ্রমিক স্ব-শাসনের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলিকেও যতটা সম্ভব ক্ষমতা স্থানান্তর করা যাতে শ্রমিক এবং নিপীড়িত অংশগুলিকে আরও রাজনৈতিকভাবে সক্ষম করা যায় সংগ্রাম করে জেতার জন্য। নির্বাচিত বা পুনঃনির্বাচিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের নীতিগত আপোষ করার প্রলোভন থাকে কারণ জনসাধারণের জন্য সংস্কারের পথই একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে ভাবাটা বিপজ্জনক। যেহেতু ভোট হচ্ছে জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সবচেয়ে নিষ্ক্রিয় রূপ। বুর্জোয়া শাসনের সামগ্রিক স্থিতিশীলতার সুবিদার্থে কাজে লাগে উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া সংস্কারের প্রচেষ্টা (যা এমনকি সফল হওয়ারও নিশ্চয়তা নেই)। কর্মক্ষেত্র ও পাড়ায় গণতান্ত্রিক স্ব-শাসিত কাঠামোগুলির সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার প্রচার শাসক শ্রেণী এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে সামাজিক সম্পর্ককে বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং টেকসই প্রভাব ফেলে।

পরিশেষে, দুটি কারণে বাম, বিপ্লবী বা এমনকি সংস্কারবাদীরা নির্বাচনী রাজনীতির উপর অতিরিক্ত নির্ভর করবেন না বা এটিকে নিজেদের সাফল্য বা বৃদ্ধির প্রধান সূচক হিসাবে দেখবেন না। প্রথমত, আঞ্চলিকভাবে চিহ্নিত নির্বাচনী এলাকাগুলি কর্মক্ষেত্রের ইস্যুগুলিকে বৃহত্তর ইস্যুর থেকে আলাদা করে দেয়। সুতরাং, বাম ইউনিয়নের প্রতি সমর্থন নির্বাচনী বা অন্যান্য রাজনৈতিক সমর্থনে রূপান্তরিত হয় না। অন্যান্য উদ্বেগগুলি শ্রমিকদের চেতনা এবং বিশ্বস্ততাকে যেখানে তারা বাস করে সেই অনুযায়ী পরিবর্তিত করে দেয়। সুতরাং, এখানে অন্যান্য সামাজিক নিপীড়ন এবং উদ্বেগগুলি অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে কিন্তু কর্মক্ষেত্রের রাজনীতি এবং সংগঠনের সাথেও যুক্ত থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত, নির্বাচনী পথকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া এবং সংস্কার করা --- যেমন সংস্কারপন্থীরা বরাবরই করেন --- আদতে সর্বনাশের প্রণালী। এর কারণ হল, পুঁজিবাদী উন্নয়নের লক্ষ্যবস্তু এবং সংকট-প্রবণ ছন্দ পর্যায়ক্রমে বেঁচে থাকার এবং জীবিকার জন্য শ্রমিকদের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করে যখন প্রকৃত আয় কমে যায় এবং সংস্কারগুলির পথ রোধ কিংবা এমনকি বিপরীতমুখে চালিত করে দেওয়া হয় নিয়োগকর্তা এবং রাষ্ট্রের দ্বারা। বাম শক্তি, সংস্কারবাদী বা কট্টরপন্থী, সর্বদা পতনের মুখোমুখি হবে যা কর্মী এবং সদস্যদের হতাশ করবে যদি না তারা বুঝতে পারে যে শ্রমিকদের দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে চেতনা বৃদ্ধির কোনও বিকল্প নেই।

 

 


Comments

Popular posts from this blog

Discussion on State_Achin Vanaik